দেশীয় কোম্পানির কাছে থেকে ডোমেইন ও হোস্টিং সেবা কেনার সুফল

domain-host Shopnoit

অনলাইনে যাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট আছে, তাদের মধ্য সম্ভবত একজনকেও খুজে পাওয়া যাবে না যিনি একবারও ডোমেইন বা হোস্টিং নিয়ে ঝামেলায় পড়েননি। হঠাৎ ওয়েবসাইটটি উধাও হয়ে যাওয়া, সাইটের গতি হঠাৎ অস্বাভাবিক ভাবে কমে যাওয়া সহ নানা বিড়ম্বনার স্বীকার হয়েছেন প্রায় সবাই। তাই ডোমেইন বা হোস্টিং সার্ভিস কেনার আগে এ সম্পর্কে ভালভাবে না জানলে বা বিশেষ বিষয় গুলোর দিকে নজর না দিলে সমস্যায় পরতে হবে সবাইকেই। ডোমেইন এবং হোস্টিং এর অনাকাঙ্খিত ঝামেলা এড়াতে অন্যান্য পরামর্শ গুলোর মধ্যে অন্যতম পরামর্শ হল দেশীয় কোম্পানির কাছে থেকে সেবা নেওয়া। বিশেষ করে নতুনদের ক্ষেত্রে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে কোন ক্রেডিট কার্ডের দরকার হয় না, সরাসরি টাকার মাধ্যমে লেনদেন করা যায়। তাছাড়া, নতুনরা এই ক্ষেত্রে অনেক টেকনিক্যাল সমস্যায় পরেন যা বিদেশী কোম্পানির কাছে থেকে সমাধান করে নেওয়া খুবই কঠিন

দেশী- বিদেশী সব হোস্টিং কোম্পানিই তাদের কাস্টমারদের সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা সাপোর্ট দেওয়ার কথা বলে। কথাটা কতটুকু বাস্তব? একটি কোম্পানি আপনার কাছে একটি সেবা বিক্রি করেছে, তাই প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকবে এই জন্য যে, কখন আপনার সেবার প্রয়োজন হবে? ব্যাপারটা কাল্পনিক । আসলে কোন একটা বিষয়ে অভিজ্ঞতা তখনি পাওয়া সম্ভব, যখন তার সম্মুখীন হবেন। বিদেশী বড় কোম্পানি গুলোর লক্ষ লক্ষ গ্রাহক থাকে আর প্রতিদিন হাজার হাজার গ্রাহক তাঁদের সমস্যা সমাধানের জন্য কোম্পানি গুলোর সাপোর্ট টিমের দ্বারস্থ হয়। কিন্তু তাঁদের মধ্যে কয়জন চাওয়া মাত্রই সাপোর্ট পান? তাদের সাপোর্ট পেতে পেতে একদিন/দুইদিন বা ক্ষেত্র বিশেষে এক সপ্তাহ থেকে দশ দিন পর্যন্ত লেগে যায়। আপনার সমস্যা সমাধান করতে যদি এত দীর্ঘ সময় লেগে যায়, তাতে যে আপনি অর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।

প্রতিদিন অসংখ্য হোস্টিং ব্যবহারকারী তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য সাপোর্ট টিমের দেখা পেতে টিকেট ওপেন করছে, কেউ লাইভ চ্যাট করার চেষ্টা করছে, কেউ বা ফোন কল করতে গিয়ে দীর্ঘ ক্ষণ লাইনে থাকছে। ইন্টারন্যাশনাল ফোন কল কতটা ব্যয়বহুল তা সবারই জানার কথা। এত কিছুর পরেও আপনি নিশ্চিত হতে পারবেন না কখন আপনার সমস্যা সমাধান হবে। বিশেষ করে, আপনি যদি এ জগতে নতুন হন এবং ইংরেজিতে কথা বলার ও অন্যের ইংরেজি কথা শুনে বোঝার সামর্থ্য না থাকে, তাহলে আপনার সমস্যা বিদেশী সাপোর্ট টিমকে বোঝাবেন কি ভাবে এবং তারাই বা আপনাকে কিভাবে সাহায্য করবে? নতুন হিসেবে আপনি প্রতিদিন নানা সমস্যার সম্মুখীন হবেন, একবার যোগাযোগ করতেই যদি এতটা ঝামেলা পোহাতে হয় তাহলে সাপ্তাহে কতবার তাদের সাথে যোগাযোগ করতে সামর্থ্য হবেন? তাই, সবচেয়ে ভাল হয় আপনি যদি দেশী কোন কোম্পানির থেকে ডোমেইন এবং হোস্টিং কেনেন। তাহলে আপনার এবং কোম্পানির সাপোর্ট টিম দুজনেরই ভাষা বাংলা, আপনার সমস্যাটা সহজে তাদের সাপোর্ট টিমকে বোঝাতে পারবেন এবং সে অনুযায়ী সাপোর্ট পাবেন। সব মাধ্যমেই খুব সহজে আপনি তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পাড়বেন। দেশের মধ্য কম খরচে, মোবাইল ফোনে কথা বলে সহজে সমস্যার সমাধান করে নিতে পারেন। প্রয়োজনে কোম্পানির অফিসে গিয়েও আপনার জটিল সমস্যার সহজ সমাধান পেতে পারেন। আর দেশী কোম্পানি বিদেশী কোম্পানির অনেক চেয়ে বেশি বন্ধুসুলভ হয়ে থাকে। তবে দেশী কোন কোম্পানির কাছে থেকে হোস্টিং সেবা নিবেন তা নির্বাচনের ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ের দিকে নজর দিতে হবে।

কিভাবে সঠিক দেশী ডোমেইন এবং হোস্টিং কোম্পানিকে বেছে নিবেন? বর্তমানে দেশে অনেক ডোমেইন-হোস্টিং সেবাদানকারী কোম্পানি আছে যারা সবাই আপনাকে সর্বোচ্চ সেবাদানের কথা বলবে। বাস্তবে সকলের সার্ভিস প্রদানের সামর্থ্য সমান নয়। অবকাঠামো বলেন বা অভিজ্ঞতা বলেন কোনটাই সবার সমান নয়।

সঠিক কোম্পানি বাছাই করতে, নিম্নে উল্লেখিত কিছু মাপকাঠির ভিক্তিতে আপনি যদি হোস্টিং সেবাদানকারী কোম্পানি নির্বাচন করেন, তাহলে আশা করি ১০০% মানসম্মত সেবা পাবেন।
১। ডোমেইন এবং হোস্টিং কেনার আগে নিশ্চিত হবেন যে, আপনি যে কোম্পানির কাছে থেকে সেবা কিনছেন, তাদের অফিস, সাপোর্ট স্টাফ, অবকাঠামো, লাইসেন্স ও অভিজ্ঞতা আছে কি না।
২। বাক্তি মানুষের কাছে থেকে কোন হোস্টিং কিনবেন না, কারণ সে যে কোন সময় হোস্টিং ব্যবসা বন্ধ করে অন্য ব্যবসা বা চাকরিতে যেতে পারে, কিন্তু একটি কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান তা পারেনা।
৩। যে কোম্পানি থেকে ডোমেইন/ হোস্টিং নিবেন সে কোম্পানির সেবা দানের বয়স জেনে নিবেন, যদি তাদের সেবাদানের অভিজ্ঞতা দীর্ঘ দিনের হয়, তাহলে আশা করা যায় ভাল সেবা পাবেন।
৪। কোন অফার প্যাকেজ কেনার আগে তা ভালোভাবে দেখে নিন, কারণ অফার দেখতে আকর্ষণীয় হলেও ভিতরে অনেক সর্ত আরোপ করা থাকে।
৫। ডোমেইন- হোস্টিং প্যাকেজ কেনার আগে ভালোভাবে জিজ্ঞেস করুন ডোমেইনের ফুল কন্ট্রোল প্যানেল দেবে কিনা। টাকা ফেরত দেওয়ার বাবস্থা আছে কিনা, আপটাইম গ্যারান্টি, ডিস্কস্পেস, ব্যান্ডউইথ, মেইল পাঠানোর ব্যবস্থা সহ অন্যান্য সব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে নেবেন।

যদি আপনি দেশীয় কোম্পানির কাছে থেকে হোস্টিং সার্ভিস কেনেন তবে যে বিশেষ সুবিধা গুলো পাবেন তা নিচের আলোচনায় দেখুনঃ
১. যেহেতু কোম্পানিটি আপনার দেশেই তাই এ কোম্পানি সম্পর্কে জানা আপনার পক্ষে সহজ। নিজেই অফিসে গিয়ে কথা বলতে পারেন এবং তারা কাজের ক্ষেত্রে কত টুকু প্রোফেসনাল তা জেনে নিতে পারেন।

২. আপনার এবং সাপোর্ট টিমের ভাষা যেহেতু বাংলা, তাই তাদের সাথে সহজে যোগাযোগ করতে পারেন ও সমস্যার কথা বোঝাতে পারেন। টিকেট ওপেন করে বা মেইল পাঠিয়ে বসে থাকার প্রয়োজন নেই, কারণ দেশের ভিতরে ফোন করা সহজ, তাই একটা কল করেই সব সমস্যার সমাধান করতে পারেন।

৩. বিদেশী কোম্পানি থেকে ডোমেইন হোস্টিং সার্ভিস কিনলে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বে আপনি শুধু মেইল পাবেন এবং সময় মত সাসপেন্ড করে দেবে। কিন্তু দেশী কোম্পানি তা করবেনা, ফোনের মাধ্যমে আপনাকে জানাবে এবং যদি বুঝিয়ে বলতে পারেন তাহলে কিছু সময় পেতেও পারেন।

৪. আপনি যদি এ ক্ষেত্রে নতুন হন তবে ভুলেও বিদেশী কোম্পানিতে এ সেবা নিতে যাবেন না, কারণ ডোমেইন এবং হোস্টিং এর ইন্টারনাশনাল ফিচারগুলো নতুনদের সাথে বন্ধু সুলভ আচরণ করেনা। এক্ষেত্রে বারবার আপনাকে হোস্টিং কোম্পানির শরণাপন্ন হওয়া লাগতে পারে সাহায্যের জন্য, যা বিদেশী কোম্পানি থেকে পাওয়া খুবই কঠিন।

সর্বশেষে বলতে পারি দেশেই যখন একটি শিল্পের বিকাশ হয়েছে, গড়ে উঠেছে বিশ্ব মানের সেবা প্রদান করার মত প্রতিষ্ঠান, যাদের সেবা নিচ্ছে বিদেশীরাও, তখন কেন বিদেশী কোম্পানির কাছ থেকে এ সেবা নিতে যাবেন? আসুন দেশীয় ভাল প্রতিষ্ঠানদের কাছে থেকে উন্নত মানের ডোমেইন-হোস্টিং সেবা গ্রহণ করি এবং দেশের IT শিল্প বিকাশে অবদান রাখি।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *